নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২০ পাসের মধ্য দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ জুন) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এ বিল পাস হয়। বুধবার (১ জুলাই) থেকে নতুন বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হবে।
মঙ্গলবার (৩০ জুন) স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হলে ২০২০-২১ সালের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আনা ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর একে একে অন্য মন্ত্রীরা তাদের স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কণ্ঠভোটে সে সব প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সর্বশেষ নির্দিষ্টকরণ বিল পাসের মধ্য দিয়ে বাজেট পাস হয়। এ সময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংসদে সরকারি বিরোধীদলীয় সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরবর্তীতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নির্দিষ্টকরণ বিল ২০২০ জাতীয় সংসদে পাস করার জন্য উত্থাপন করেন। পরে কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতভাবে তা পাস হয়। এ সময় সংসদে উপস্থিত সদস্যরা টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।
উল্লেখ্য, গত ১১ জুন বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এবারের বাজেটের শিরোনাম ছিল ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’। বাজেটে জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।
বাজেটে জিডিপি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেট ব্যয়ের জন্য মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা। এই বাজেটে ঘাটতির (অনুদানসহ) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা, এটি মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ। এটি এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। এরমধ্যে আবর্তক ব্যয় হচ্ছে ৩ লাখ ১১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এ আবর্তক ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে খরচ হবে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। এছাড়া সম্পদ সংগ্রহ, ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ ও পূর্তকাজ, শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগসহ মূলধনী ব্যয় হবে ৩৬ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। পাশাপাশি ঋণ ও অগ্রিম বাবদ ব্যয় ৪ হাজার ২১০ কোটি টাকা।
আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের ব্যয় মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) কর রাজস্ব আহরণ করতে হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি করবহির্ভূত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং কর বাদে প্রাপ্তির পরিমাণ হচ্ছে ৩৩ হাজার ৩ কোটি টাকা। আয়ের দিক থেকে আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা।
জানা গেছে, এবারের বাজেটে নির্দিষ্ট কিছু শর্তে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
অপ্রদর্শিত আয়ের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ আরও শিথিল করে গতকাল সোমবার (২৯ জুন) অর্থবিল ২০২০ অনুমোদন করেছে জাতীয় সংসদ। আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে বিনিয়োগের টাকা তিন বছর বাজারে ধরে রাখার (লক-ইন) শর্ত দেওয়া হয়েছিল। দুই বছর কমিয়ে এখন শুধু এক বছর করা হয়েছে।
বাজেট প্রস্তাবে কোনও জরিমানা ছাড়া শুধু ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী। অর্থনীতির মূলধারায় অর্থের প্রবাহ বাড়ানোর স্বার্থের কথা বলে অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন।
সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্যান্য সিকিউরিটিজের ক্ষেত্রেও একই সুযোগ রাখা হয়। বলা হয়, অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ এসব খাতে বিনিয়োগ করলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বা সরকারের অন্য কোনও দফতর টাকার উৎস জানতে চাইবে না।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু শর্ত ছিল তিন বছর ধরে রাখার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এমনকি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বালাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) লক-ইনের শর্ত পুরোপুরি তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল।